লেখক কথনঃ একটি আর্টিকেল এর জন্য যৌক্তিকভাবে আমি কত চার্জ করবো?

পরিচিতরা একটি প্রশ্ন প্রায়শই করেন আমায়,


"একজন আর্টিকেল রাইটার এর লেখার দাম/অনারিয়াম কত হতে পারে বলে তুমি মনে করো?"


ভাই, আমি নিজে খুব বড় কিছু নই। যদিও ইংরেজীতে লেখালিখি করে ভাত-কাপড় জোটে (নিতান্তই Working Class বাংলা কথা ব্যবহারের জন্য দুঃখিত), তবু খুব ভালো লিখতে পারিনা। যতটুকু পারি নিজের প্রোফেশন এবং প্যাশন একই হবার কারণে উজাড় করে দেবার চেষ্টা করি।


এক্সপার্ট অথর বলে নিজেকে দাবী করা তো দূরে থাক, তাঁরা যেভাবে লেখেন তার এক ফোটাও ইম্যুলেট করতে পারিনা। তাই এধরণের প্রশ্নের উত্তর দেবার যোগ্যতাও রাখিনা।


তাই তাত্বিকতার ধারে কাছে যাবোনা। নিতান্তই একটা উদাহরণ দেই। একজন "ভালোমানের রাইটার" (যা এখনো হবার চেষ্টা করছি) একটি আর্টিকেল এর পেছনে সময় দেন। বিষয় জানা থাকুক বা অজানা সেটা নিয়ে রিসার্চ করে একটা ইউনিক পার্সপেক্টিভ থেকে লেখার চেষ্টা করেন।


ধরুন তিনি একটা এক হাজার শব্দের আর্টিকেল লিখছেন। এখানে যে কেউ আর্টিকেলটা শেষ হবার পর দেখবেন। তবে আর্টিকেলটা লিখতে গিয়ে তার কিছু সময় রিসার্চ করতে হয়। তারপর প্রাপ্ত তথ্যগুলো সাজিয়ে লিখতে হয়। ভালো রাইটার অবশ্যই চাইবেন একই বিষয়ে দুটো আর্টিকেল হলেও শব্দ-চয়নে তো বটেই, দৃষ্টিকোণও যেন দুটোর দু' রকম হয়। এক্সপার্ট রাইটারকে লেখার সময় না দেখলে বোঝাই যাবেনা একই বিষয়ে দু'মেরুসম আর্টিকেল দুটি তিনিই লিখেছেন।

সেই রাইটারকে আর্টিকেল লিখবার সময় বর্তমান সময়ে অন-পেজ এসইও এর দিকটি খেয়াল রাখতে হয়। পোস্ট রিলেটেড কীওয়ার্ড এবং মাদার কিওয়ার্ড তার আর্টিকেলটায় সঠিকভাবে ইন্টিগ্রেট হচ্ছে কিনা, এটা করতে গিয়ে আর্টিকেল লেখার টোন আলাদা হয়ে যাচ্ছে কিনা সেটাও দেখতে হয়।
আবার গ্রামাটিকালি কারেক্ট পিস (আর্টিকেল) লিখতে হয়। কোনভাবেই সেনটেন্স, সিনট্যাক্স, কনটেক্সট, টপিক ইন্টিগ্রিটি গুলিয়ে ফেলা যাবেনা। বেশি বড় বাক্য ব্যবহার করা যাবেনা।

আর্টিকেল শেষে আবার তাঁকে সেটি অনলাইনে পেইড টুল দিয়ে (এক্সপার্টরা পেইড টুল ব্যবহার করেন) পর্যালোচনা করতে হয়। সেগুলোর দামও কিছুটা চড়া। কিছু কিছু পেইড টুলে সুবিধা বেশি, সেগুলো মাসিক সাবস্ক্রিপশন ফি বেশি।

এরপর সেই আর্টিকেলটি ফাইনাল ফলোআপ শেষে ক্লায়েন্টকে জমা দিতে হয়।

খুব সোজা মনে হলো?

এক্সপার্ট অথর রা লেখার কাজটি করেন ৪০ থেকে ৪৫ মিনিটে কারণ টাইপিং স্পিড বেশি হয় তাদের।

এখনো সোজা মনে হচ্ছে?

তাঁরা আবার টপিক রিসার্চ করেন দেড় ঘন্টায়। সেটাকে মনের মধ্যে সাজান ৫-৭ মিনিট। অনেকে আরও সময় নেন। পুরো আর্টিকেল লেখার সময় কনটেন্ট এ কীওয়ার্ড দিয়ে লেখার জন্য পারফেক্ট জায়গা খুজতে ব্রেইন সচল রাখতে হয়।


কোনভাবেই যেন কীওয়ার্ড স্টাফিং না হয়। অড না শোনায়, গ্রামার মিসটেকস না হয়। এক শব্দ বারবার ওভার ইউজড যেন না হয়। তার বদলে সিমিলার অন্য শব্দ ব্যবহার করতে হয়। সেটার জন্য ভাবতে হয় সব মিলিয়ে ১০ মিনিট।


গ্রামার চেকিং আর ফরম্যাটিং এর জন্য রাখতে হয় ১০-১৫ মিনিট। আমি আরও বেশি সময় নিয়ে করি কাজগুলো।

এই গেল ৩ ঘন্টা।

জ্বী! ৩ ঘন্টাই লাগে! এবার বলুন শুধু লেখার পরিশ্রমটা বাদে তাদের কত দেয়া উচিৎ।

না ভুল বললাম এই কাজগুলোর জন্য তাঁর কত পাওয়া উচিৎ।

আর্টিকেল লেখা মানে তো আর লেখা নয়, সব দিক বিচার করেই লেখা। আর্টিকেল রাইটাররা একটি আর্টিকেল এর পারিশ্রমিক পান কয়েকটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করেঃ

- নিবন্ধ তথা লেখকের ইংরেজী লেভেল কেমন?

- বিষয় বুঝেছেন কিনা?

- এক্সপার্ট ইন্টারনেট রিসার্চ করতে পারেন কিনা?

- রিসার্চ এক্সটেন্সিভ কিনা?

- রিসার্চ করতে কত সময় লাগছে তাঁর? ধরেন আপনি একজন রাইটারকে দিয়ে সবচেয়ে ভালো আউটপুট চাচ্ছেন যা সবাই চায়। এরজন্য তাঁর এক্সটেনসিভ রিসার্চ করা তো প্রয়োজনই, সাথে সেই মাপের সময়ও দেয়া প্রয়োজন। হতে পারে লেখক ভদ্রলোক সারাদিন রিসার্চ করে রাতে লিখতে বসছেন। আপনার কাজের প্রতি গুরুত্ব দিতে গিয়ে তিনি অন্য কাজের প্রতি মনোযোগ কম দিচ্ছেন বা দিচ্ছেন না। ক্লায়েন্ট হিসেবে আপনার উচিত তাঁর এই ডেডিকেশনের যথার্থ মূল্যায়ন করা আর সেটার প্রতিফলন তাঁর সম্মানীতে ঘটানো (পলাশ ভাই এর সাথে একটি মিট আপে কথোপকথনের সারমর্ম)।

- শাব্দিক দক্ষতা বা Vocabulary কেমন? (শেকস্পিরীয় নয়, বরং তিনি কত সহজে কনসেপ্ট ব্যাখ্যা করতে পারেন)

- কত দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে লিখতে পারছেন?

- লেখার সময় অনপেজ এসইও ফ্যাক্টর ন্যাচারালি ইন্টিগ্রেট করছেন কি?

- নিজের লেখা এডিট করতে পারেন কিনা? পারলে কেমন পারেন?

- এডিটিং এ পেইড টুল ব্যবহার করেন কিনা?

-পেইড টুল ব্যবহারে দক্ষতা কেমন?

- তাঁর ক্লায়েন্ট এর বাজেট কেমন?

এরমধ্যে স্বভাবতই ইন্টারনেট রিসার্চ, ইংরেজী দক্ষতা, শাব্দিক প্রাঞ্জলতা, অনপেজ এসইও দক্ষতা, গ্রামার চেকার টুল এবং আর্টিকেল ডেলিভারীর দ্রুততার উপর তাঁর রেমুনারেশন নির্ভর করবে। একজন রাইটার তাঁর ক্ষমতার স্কেলিং ডলারে করলেই তাঁর রেমুনারেশনও পেয়ে যাবেন। সেই রেমুনারেশন বাড়ানোর উপায় হলো নিজেকে রি-ইনভেন্ট করা এবং পড়া।

Comments

  1. অসাধারন ভাই। তবে এটা পড়লে কেউ রাইটার হতে চাবে না :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভাইজান, প্রথমত এত দেরী করে উত্তর দেয়ার জন্য আমি লজ্জিত। রাইটার হওয়ার জন্য কিছু কষ্ট তো করতেই হবে...। সবার আসলে এই পথে আসার দরকারও নেই। সত্যিকার অর্থেই যদি কেউ মজা পায় লেখালিখিতে, তাকে দিয়ে এই সেক্টরের অনেক কিছু হবে বলে আমার বিশ্বাস।

      সে কাজগুলো মজা নিয়ে করবে। :)

      Delete
  2. ধন্যবাদ ভাইয়া হয়তো নিজে লিখেন তাই এত সুন্দর করে বুঝিয়েছেন। সত্যি ভালো লাগলো লেখাটি। মন চাইছে আপনাকে কাচ্চি খাওয়াই। এভাবেই আমাদের সঙ্গী হবেন। পারলে একটি ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায়েন অধম কে। কারণ আমাদের সমস্যা কেউই বুঝতে চায় না। লেখক কে যেন পথে ঘাটে পাওয়া যায়। আবারো ধন্যবাদ এত সুন্দর লেখার জন্য।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমার লেখাটা আপনার বা আপনাদের উপকারে এলেই আমি খুশি। দোয়ায় স্মরণ রাখবেন। :)

      Delete
  3. ধন্যবাদ ভাই বিষয়গুলো এত সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলার জন্য।

    ReplyDelete

Post a Comment